Tuesday, September 2, 2008

আমাদের শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থা

ধরে নেয়া যেতে পারে একজন ছাত্র ১৬ বছর বয়সে এসএসসি দিয়ে থাকে। ১৮ বছর বয়সে এইচ এসসি এবং ২৩ এ বি এ/ বি এসসি। যদি এমনটি হয়ে থাকে, তাহলে একটি ছেলের ছয় বছর বয়সে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হওয়ার কথা..... কিন্তু কিন্ডারগার্টেনগুলোতে শিশুদের ওয়ানে উঠতে কোথাও একটি, কোথাও দুটি, কোথাও বা তিনটি ক্লাস অতিক্রম করে আসতে হয়। ঢাকায় আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, সাড়ে তিন/ চার বছরের শিশুদের স্কুলে পাঠানো হয়। নিচের দিকের ক্লাসে বিশেষত প্লে গ্রুপের ক্লাসে অক্ষর জ্ঞানের চেয়ে এন্টারটেইনমেন্টের ব্যবস্থা একটু বেশি রাখা হয়। শিশুরা উৎসাহী হয়, সে উৎসাহ অক্ষর জ্ঞান দানের মাধ্যমে স্তিমিত হয়ে আসে। ঐ বয়সে বোঝা বহন করার অভ্যাস করানো হয়, প্রতিযোগিতা তৈরি করানো হয়। প্রশ্ন থেকে যায়, এসব কিছু তিন সাড়ে তিন বছরের শিশুর জন্য উপযোগী কিনা।

এটা অবশ্য ঠিক সবারই গ্রোথ বয়স অনুপাতে একরকম হয় না। সব ফ্যামিলির শিশুরায় এক রকম মানসিক বিকাশ নিয়ে বেড়ে উঠে না। আমার এক কলিগ, তার সাড়ে তিন বছরের ছেলেকে স্কুলে প্লে গ্রুপে ভর্তি করান। সে যখন স্কুলে অন্য আর সব বাচ্চাদের সাথে টম-জেরির কার্টুন দেখত, তখন স্কুলে যাওয়ার ব্যাপারে ভীষণ আগ্রহ দেখাত। দুই তিন মাস পর যখন স্কুলের ম্যামরা মনে করলেন শিশুরা এখন স্কুলে নিজেদের মানিয়ে নিতে শুরু করেছে তখন অক্ষর জ্ঞান দেয়া শুরু করলেন। শিশুটির কাছে স্কুলটি অসহ্য হতে শুরু করে। তাকে জোর করে স্কুলে পাঠাতে হয়। সাড়ে তিন বছরের একটা শিশুর উপর জোর করা কি সাজে?

আমার আরও কিছু করুণ অভিজ্ঞতার কথা জানা আছে যেখানে শিশুদের প্রতি নিদারুণ কষ্ট দেয়া হয় শিক্ষিত হওয়ার স্বার্থে। এমনও কিছু শিশুর কথা জানি স্কুল থেকে বাসায় যেতে চায় না কেবল বাবা-মায়ের মার এবং বাসায় অতিরিক্ত চাপাচাপির কারণে। স্কুলে এটা সেটা নাম দিয়ে পরীক্ষা লেগেই আছে। রেজাল্ট হাতে পেয়ে অসহায় করুণ কান্নার কথা জানি যেখানে সে রাস্তা খুঁজে কিভাবে বাবামায়ের বকুনি থেকে রেহায় পেতে পারে।...... এসব আমার দেখা ঢাকা শহরের কিছুটা চিত্র।

উল্টোটা আরও করুণ। গ্রামের অনেক স্কুলে শিশুরা এমনও আছে, যারা ফাইভ সিক্সে পড়ে অথচ বর্ণমালা এখনও রপ্ত করতে পারেনি। শিক্ষা অর্জনটা মুল উদ্দেশ্য নয়, গম পাওয়াটায় মূখ্য। কিছুদিন আগে গ্রামে গিয়েছিলাম। নানাকে জিজ্ঞাসা করলাম ছেলেদের লেখাপড়ার অবস্থা কি। নানা বললেন, আগের থেকে অবস্থা খারাপ। স্কুল ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে গেছে।

আমার আরও একটি বিষয় খুব জানতে ইচ্ছা করে, বেত ছাড়া কি ছাত্রদের আসলেই শিক্ষিত করা যায় না? অন্য সব দেশেও কি ছাত্রদের মারের ভয় দেখিয়ে শিক্ষিত করা হয়? শিশুদের সঠিক বিকাশের জন্য কি ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা উপযোগী এবং কার্যকর- এগুলি শেয়ার করলে কৃতজ্ঞ থাকব। আমি কেবল কিন্ডারগার্টেনের কথায় বলছি যেখানে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়ানো হয়ে থাকে।

11 comments:

umm_abdullah said...

পোস্ট যথারীতি সুন্দর। আমি বেত পছন্দ করিনা। তাবে বাংলাদেশের মত দেশে বেতের বিকল্প আসতে সময় নিতে পারে। শিক্ষক ছাত্রের অনুপাত কমতে হবে।

যাযাবর said...

শিক্ষার্থীদেরকে মারামারি করে পড়ালেখা শেখানো সম্পূর্ণ অমানবিক।

মাহমুদ রহমান said...

কিছু পরামর্শ চাইলাম, কেউ সেদিকে খেয়ালই করল না। প্লিজ, এদের জন্য ভালো কোন আইডিয়া থাকলে শেয়ার করুন। আমার ভীষণ দরকার। দরকারটা আরও কিছুদিন পরে বলি।

umm_abdullah said...

পশ্চিমে বাচ্চাদের মারধোর করা নিষেধ। তাদেরকে অন্যভাবে শৃংখলা শেখানো হয়।

আর এমনিতে আমি মনে করি শিশুকে শেখানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হল সাহচর্য। বাবা মাকে সন্তানের সাথে সময় দিতে হবেই। যা কর্মজীবি মায়েদের জন্য চ্যালেজ্ঞ। আমার মেয়ে ক্লাশে একটু পিছিয়ে ছিল। ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করছি। আস্তে আস্তে এখন অনেকটাই এগিয়ে এসেছে।

মাহমুদ রহমান said...

ধন্যবাদ আপু। আমিও তাই মনে করি, মায়েদের ইনভল্ভমেন্ট জরুরি। এক্ষেত্রে স্কুল সেরকম একটা এনভায়রনমেন্ট তৈরি করতে পারে।

umm_abdullah said...

শুধু মা নয়, মা বাবা দুজনের সাহচর্য খুব গুরুত্বপূর্ন।

ochena_pothik said...

আমার কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে ইচ্ছে হলো।
আমার শিক্ষা জীবনটা শুরু হয়েছে মায়ের হাত ধরে। অক্ষরজ্ঞানটা বাসায় রপ্ত করে ফেলে স্কুলে যাই পাচ বছর বয়সে- সরাসরি কেজি ২ তে।
কেজি স্কুলে শুধু পেন্সিল্টা নিয়ে যেতে হতো- আর কিছু না। জেইন এন্ড জিলের বইটা রিডিং পড়াতেন মিস। তা পড়তে পারতাম দেখে টিচাররা বেশ অবাক হয়ে সবসময় প্রশ্ন করতেন আমি এসব কার কাছে শিখেছি!

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরোটাই পার করে দিয়েছি প্রাইভেট টিউটর তো দূরের কথা,পড়ার টেবিল পর্যন্ত ছাড়া। হাতে গোনা যা হোমওয়ার্ক থাকত, তা শুয়ে বসেই করে ফেলতাম। স্কুলে কখনো ১৫ জনের বেশি ক্লাসমেট পাইনি। আর বেত? সেটা আবার কি জিনিস? কখনো ক্লাসে কেউ দুষ্টামি করলে তাকে শুধু চেয়ারের উপর দাড় করিয়ে রাখা হতো, এই যাহ।

স্কুলের টিচাররা বন্ধুর চেয়ে বেশি। মনে আছে- ক্লাস ফাইভ এর টিচার কে প্রথম দিনে "টিচার" ডেকেছি বলে উনি আমাদেরকে স্টূডেন্ট ডাকা শুরু করলেন- কারন, "টিচার"টা উনার নাম না, উনার পেশা। আমাদেরকে বলেছিলেন উনার নাম ধরে ডাকতে!

বড় পরীক্ষা হতো কেবল ৩ বার, আর সকাল বিকেল করে ৫ দিনেই পরীক্ষা শেষ। কোনো পরীক্ষার আগে বন্ধ দিতে হয়, এইটা আমাদের জানা ছিলনা। কারন, সবই তো ক্লাসে পড়ানো বিষয়, নতুন কিছু তো আর মুখস্থ করেও লাভ নেই।
সেই পরীক্ষাটা হোক না ম্যাথ বা সাইন্স, যেকোনও পরীক্ষাতেই ১০০তে ১০০ তোলা কোনো ব্যাপার না- কারন সেখানে তো আর থিওরেটিকেল প্রশ্নের স্থান নেই।

কোনো টেস্টে ভাল স্কোর করলে মিলত একটা ছোট ছবিযুক্ত সার্টিফিকেট। সেই সার্টিফিকেটটা নিজেরা রং করে ক্লাসরুমের দেয়ালে লাগিয়ে রাখতাম। বছর শেষে যার সবচে' বেশি সার্টিফিকেট-তার মিলত পুরস্কার :-D!

ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে একটা পুরো গল্পের বই পড়িয়ে ফেলেছিলেন টিচার। গল্পের নামটা এখন আর মনে নেই-ওয়ার্ড্রবের ভেতর দিয়ে ভিন দেশে চলে যাওয়া যেত, তা মনে আছে!!

খাইসে!! একটা পুরো পোস্টই তো লিখে ফেললাম- থাক বাকি অভিজ্ঞতা নিয়ে পোস্ট দিমুনে।

শেষ কথা একটা- এই সবই সম্ভব হয়েছিল, কারন বিদ্যালয়টা ছিল ভিন দেশের একটি আন্তর্জাতিক বিদ্যালয়।

এখন মনে হয় বারবার সেই স্কুলের ছেলেবেলায় চলে যাই।। আহহ কত্ত মজায়ই না ছিলাম তখন!

মাহমুদ রহমান said...

অচেনা পথিককে অনেক ধন্যবাদ অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য। নার্সারি, প্লে এসব ছিলো না? কেজি ২ এর পরে কোন ক্লাস পড়েছেন?

বাকী অভিজ্ঞতা নিয়ে আপনার প্রতিশ্রুত পোস্ট আশা করছি।

umm_abdullah said...

নার্সারী, প্লে গ্রুপ এগুলো এখানে রেগুলার স্কুলের অংশ নয়। বরং ডে কেয়ারের অংশ। স্কুল শুরু হয় কেজি থেকে।

ochena_pothik said...

নার্সারি, প্লের নাম শুনছি এখন। KG2 এর পর সরাসরি চলে গিয়েছিলাম ক্লাস ২ তে। ক্লাস ১ পড়িনি। মা বলতেন-এটা নাকি পারিবারিক ঐতিহ্য।
কেজির পর দেশে এসে প্রায় ছ মাস থাকতে হয়েছিল, তাই গিয়ে ক্লাস ২ এর অর্ধেকে ঢুকে গিয়েছিলাম। কখনো কোনো সমস্যায় পরতে হয়েছিল বলে মনে পড়ে না।

আমি যেটা বুঝাতে চেয়েছি, তা হলো এখন পোলাপাইন নার্সারী প্লেতে হাজার হাজার টাকা খরচ করে যা শিখছে ঘরে মায়ের কাছে বিনামূল্যেই আমরা তা শিখে ফেলেছিলাম। (অবশ্য আজকালের বাচ্চারা তো আর আমাদের মত ভদ্র না, এসব এখন হয়তো আর চলবে না - :D)
বাংলা শিখেছি বাল্য শিক্ষা থেকে। মা বলতেন আমার দাদীরা নাকি এক বাল্য শিক্ষা পরেই বাংলায় চিঠি লিখতে পারতেন, ওটা পরতে পারলে নাকি ক্লাস থ্রির পাঠ্য পড়া হয়ে যায়! আমরাও ঐ বাল্য শিক্ষার বিদ্যে দিয়ে দেশের আত্নীয়দের বাংলায় চিঠি লিখার চেষ্টা করতাম।


আমার মা নিজে খুব বেশি শিক্ষিত নন- কিন্তু উনি আমাদের সব ভাই বোনদেরই প্রথম শিক্ষক।
আজকালের অনেক শিক্ষিত কর্মজীবি মাদের কে দেখি নিজের সন্তানদের অ আ পর্যন্ত শিখানোর সময় নেই। নার্সারী-প্লেতেও কম্পিটিশনে টিকে থাকতে ওদেরকে তাই পড়তে হয় প্রাইভেট টিউটরের কাছে কিংবা কোচিংএ। হয়তো ওদের অতি শিক্ষিত মা তখন অফিসে বসে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখছেন, কিংবা অন্যের সন্তানদের সুশিক্ষিত করছেন।

সন্তান তিন বছর হতে না হতেই মা বাবাদের এখন ঘুম হারাম হয়ে যায়।।
কই,এতো কম্পিটিশনে তো আমরা কখনওই যাইনি-মা বাবাদের ঘুম হারাম হওয়া তো দূরে থাক,মাঝে মাঝে প্রশ্ন করে জেনে নিতে হতো "তুমি যেন কোন ক্লাসে পড়???!!"

এখন এদের দেখে প্রশ্ন জাগে,আমাদের মা-বাবারা কি আমাদের শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পারেননি?

মাহমুদ রহমান said...

ধন্যবাদ, আলোচনা বেশ জমে উঠেছে।

আমিও কিছুটা শেয়ার করি। আমি স্কুলে যাওয়া শুরু করি ৫ বছর বয়সে শিশু শ্রেণীতে। এরপর ক্লাস ১...... এভাবে বাকীগুলি। ক্লাস নাইন/টেনে কেবল শিক্ষকের কাছে ব্যাচে পড়েছি। স্কুল জীবনের শুরুতে আম্মা পরিশ্রম করেছেন ব্যাপক। ভীষণ ফাঁকিবাজি ছিলাম। শিক্ষকরা খুব স্নেহ করতেন। আমার স্কুলের নাম ছিল হাজী শরীয়তুল্লাহ একাডেমী। স্কুল যে বছর চালু হয় তার পরের বছর আমি ঐ স্কুলের ছাত্র ছিলাম। ৯০ এর কম পেলে বুঝতাম সে সাবজেক্ট খুব খারাপ হয়েছে।

ঐ স্কুলের সিস্টেমটা আমার কাছে ভাল লেগেছে। তবে আরও কিছু বিষয় সামনে আনা উচিত।