Tuesday, September 2, 2008

আমাদের শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থা

ধরে নেয়া যেতে পারে একজন ছাত্র ১৬ বছর বয়সে এসএসসি দিয়ে থাকে। ১৮ বছর বয়সে এইচ এসসি এবং ২৩ এ বি এ/ বি এসসি। যদি এমনটি হয়ে থাকে, তাহলে একটি ছেলের ছয় বছর বয়সে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হওয়ার কথা..... কিন্তু কিন্ডারগার্টেনগুলোতে শিশুদের ওয়ানে উঠতে কোথাও একটি, কোথাও দুটি, কোথাও বা তিনটি ক্লাস অতিক্রম করে আসতে হয়। ঢাকায় আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, সাড়ে তিন/ চার বছরের শিশুদের স্কুলে পাঠানো হয়। নিচের দিকের ক্লাসে বিশেষত প্লে গ্রুপের ক্লাসে অক্ষর জ্ঞানের চেয়ে এন্টারটেইনমেন্টের ব্যবস্থা একটু বেশি রাখা হয়। শিশুরা উৎসাহী হয়, সে উৎসাহ অক্ষর জ্ঞান দানের মাধ্যমে স্তিমিত হয়ে আসে। ঐ বয়সে বোঝা বহন করার অভ্যাস করানো হয়, প্রতিযোগিতা তৈরি করানো হয়। প্রশ্ন থেকে যায়, এসব কিছু তিন সাড়ে তিন বছরের শিশুর জন্য উপযোগী কিনা।

এটা অবশ্য ঠিক সবারই গ্রোথ বয়স অনুপাতে একরকম হয় না। সব ফ্যামিলির শিশুরায় এক রকম মানসিক বিকাশ নিয়ে বেড়ে উঠে না। আমার এক কলিগ, তার সাড়ে তিন বছরের ছেলেকে স্কুলে প্লে গ্রুপে ভর্তি করান। সে যখন স্কুলে অন্য আর সব বাচ্চাদের সাথে টম-জেরির কার্টুন দেখত, তখন স্কুলে যাওয়ার ব্যাপারে ভীষণ আগ্রহ দেখাত। দুই তিন মাস পর যখন স্কুলের ম্যামরা মনে করলেন শিশুরা এখন স্কুলে নিজেদের মানিয়ে নিতে শুরু করেছে তখন অক্ষর জ্ঞান দেয়া শুরু করলেন। শিশুটির কাছে স্কুলটি অসহ্য হতে শুরু করে। তাকে জোর করে স্কুলে পাঠাতে হয়। সাড়ে তিন বছরের একটা শিশুর উপর জোর করা কি সাজে?

আমার আরও কিছু করুণ অভিজ্ঞতার কথা জানা আছে যেখানে শিশুদের প্রতি নিদারুণ কষ্ট দেয়া হয় শিক্ষিত হওয়ার স্বার্থে। এমনও কিছু শিশুর কথা জানি স্কুল থেকে বাসায় যেতে চায় না কেবল বাবা-মায়ের মার এবং বাসায় অতিরিক্ত চাপাচাপির কারণে। স্কুলে এটা সেটা নাম দিয়ে পরীক্ষা লেগেই আছে। রেজাল্ট হাতে পেয়ে অসহায় করুণ কান্নার কথা জানি যেখানে সে রাস্তা খুঁজে কিভাবে বাবামায়ের বকুনি থেকে রেহায় পেতে পারে।...... এসব আমার দেখা ঢাকা শহরের কিছুটা চিত্র।

উল্টোটা আরও করুণ। গ্রামের অনেক স্কুলে শিশুরা এমনও আছে, যারা ফাইভ সিক্সে পড়ে অথচ বর্ণমালা এখনও রপ্ত করতে পারেনি। শিক্ষা অর্জনটা মুল উদ্দেশ্য নয়, গম পাওয়াটায় মূখ্য। কিছুদিন আগে গ্রামে গিয়েছিলাম। নানাকে জিজ্ঞাসা করলাম ছেলেদের লেখাপড়ার অবস্থা কি। নানা বললেন, আগের থেকে অবস্থা খারাপ। স্কুল ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে গেছে।

আমার আরও একটি বিষয় খুব জানতে ইচ্ছা করে, বেত ছাড়া কি ছাত্রদের আসলেই শিক্ষিত করা যায় না? অন্য সব দেশেও কি ছাত্রদের মারের ভয় দেখিয়ে শিক্ষিত করা হয়? শিশুদের সঠিক বিকাশের জন্য কি ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা উপযোগী এবং কার্যকর- এগুলি শেয়ার করলে কৃতজ্ঞ থাকব। আমি কেবল কিন্ডারগার্টেনের কথায় বলছি যেখানে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়ানো হয়ে থাকে।

Friday, August 15, 2008

দাদার সাথে একটি সপ্তাহ- পর্ব ২

দাদা একবার উনার প্রতিষ্ঠান থেকে একটা পরীক্ষা নিয়েছিলেন। ১৪ জন আলেম পরীক্ষায় অংশ নেন যারা সকলেই মাদ্রাসার বিভিন্ন পর্যায় পার করে এসেছেন। সমাজে আলেম হিসাবে পরিচিতি আছে। প্রথম প্রশ্নে বলা হয়েছিলো কালেমা তাইয়্যেবা আরবীতে লিখে তার অনুবাদ এবং ব্যাখ্যা লিখতে। দাদা দুঃখ করে বলছিলেন ১৪ জনের একজনও শুদ্ধ করে কালেমা তাইয়্যেবা লিখতে পারেননি।

দাদার মতে, যেকোন সমস্যা তৈরি হলে তা দ্রুত সমাধান করতে হবে। এসব ব্যাপারে কালক্ষেপণ করা যাবে না। আগুনে বাতাস লাগার আগেই তা নিভিয়ে ফেলতে হবে। নইলে বড় ক্ষতির আশংকা আছে। পরিবারে সমস্যা তৈরি হলে কিভাবে তার সল্যুশন হবে...... এমন একটা উদাহরণ আমাকে শোনালেন। দাদার অভিজ্ঞতা হচ্ছে, বাড়ীর বড় ছেলেকে যদি 'মানুষ' করা যায় তবে অন্যদের 'মানুষ' করতে বেগ পেতে হয় না।

আল্লাহকে না মানার মধ্যেই আসলে সব সমস্যা। কুরআনকে বুঝতে না পারা, দ্বীনকে বুঝতে না পারায় হচ্ছে সকল সমস্যার উৎস। নইলে কোন সমস্যায় আসলে সমস্যা নয়। দাদার মতে, নতুন করে কুরআন থেকে অনেক ম্যাসেজ পাচ্ছেন। আফসোস করে বলছিলেন, এসব যদি বয়স থাকতে বুঝতে পারতাম, অনেক কিছু করার ছিল। আমি তাঁকে আশ্বস্ত করি, আপনি যা বুঝছেন আমাদের শিখিয়ে দিন.... আমরা চেষ্টা করব।

সপ্তাহান্তে দাদা অস্থির হয়ে পড়লেন। তার আর মন টিকল না। সময়গুলো যেন দাদার কাছে অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে। ঢাকায় থেকে তাঁর দাওয়াতী কাজ চালানো সম্ভব হচ্ছে না। দাদা সামনের রমজানে তাঁর পরিকল্পনা এবং চিন্তার কথা শুনিয়ে বলছিলেন.....এর পরের রমজান যদি না পাই? হঠাৎ করে, আমার মনে হলো আমি কি নিশ্চিত যে পরের রমজান আমি পাব? আসলে মৃত্যুর চিন্তা মানুষকে গুছিয়ে কাজ করতে সাহায্য করে- খুব ভাল মতই টের পেলাম। তবে হ্যাঁ, আরও একটি ব্যাপার আছে- ইহজীবন, তার পরের জীবন এবং এসবের স্রষ্টার ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি হতে হবে স্বচ্ছ।

প্রায় পঁচাশি বছরের বৃদ্ধ দাদা, যিনি দীর্ঘদিন থেকে হার্টের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁকে গ্রামে রাখতে অফিস থেকে একদিনের ছুটি নিলাম। বাসে দাদার সাথে খুব বেশি কথা হয়নি। গাড়ীর শব্দ, তার উপর দাদা কানে একটু কম শুনেন। গাড়ীতে থাকা অবস্থায় আমার কাছে একটিও ফোন এল না, কেবল দাদার মোবাইল টুংটুং করে বেজে উঠে। আত্নীয় স্বজনেরা তাঁর যাত্রা নিয়ে উদ্বিগ্ন আর তিনিই তাঁদের আশ্বস্ত করছিলেন। দাদা জানালার পাশের সিটে বসেছিলেন, আমি ছিলাম তাঁর পাশে। দুজনেই চুপচাপ বসে আছি। একবার ফোন আসল, রিসিভ করলেন। ফোন রেখে দিয়ে প্রায় অপ্রাসংগিকভাবেই বললেন, আমার আর সব ছেলে যদি তোমার আব্বার (এখানে উনি আমার আব্বার নাম বলেছিলেন) মত হতো! আবার নিরবতা, আমার চোখ ভিজে আসল...... সামনে ঝাপসা দেখলাম। খুব ভাল মতই একজন বৃদ্ধের আর্তি আমার মন ছুঁয়ে গেল। আমি খেয়াল করলাম, আসলে মানুষের কিছু অব্যক্ত ব্যথা থাকে যেগুলি অপ্রকাশিত থাকতেই পারে না। তিনি তাঁর সব সন্তানকেই সমান ভালোবাসেন সেটা বুঝেছি অন্য একটা ব্যাপারে, কিন্তু তিনি এমন সন্তান রেখে যেতে চান যে সন্তান তার মৃত্যুর পরে তার জন্য দোয়া করবে।

দাদা আরবী এবং ইংরেজি দুই ব্যকরণেই বেশ দক্ষতা রাখেন, তিনি মূলত ইংরাজীর ছাত্র ছিলেন। কিন্তু সেই আমলে হাই মাদ্রাসায় পড়ে আরবীটাও বেশ রপ্ত করতে পেরেছিলেন। তিনি বলেন, ইংরাজীর থেকে আরবী ব্যকরণ অনেক বেশি সহজ। আরবীতে ডেরিভেটিভ ওয়ার্ড অনেক বেশি, কেবল মুল ধরতে পারলে অর্থ বের করা সহজ হয়। ব্যকরণ জানা থাকলে কোরআন পড়ে মজা লাগে। তিনি কুরআনের প্রশংসা যখন করেন তখন তার মুখ থেকে 'ভারী সুন্দর' কথাটা শুনতে বেশ লাগে! শব্দ দুটির মধ্যে স্বতস্ফুর্ত আবেগ লক্ষ করি।

দাদার এই এক সপ্তাহের ঢাকা সফরে দাদা কি পেলেন জানি না, তবে আমি অনেক কিছুই পেয়েছি। জ্ঞান এবং সুন্দর জীবনবোধ থাকলে বৃদ্ধ বয়সেও মানুষ সুস্থ থাকতে পারে, প্রয়োজনীয় থাকতে পারে; সর্বোপরি এমনভাবে সে চলতে পারে যে- কেউ চাইলেই তাঁকে এক্সপ্লয়েট করতে পারে না, তাঁকে করুণা নিয়ে চলতে হয় না। আলহামদুলিল্লাহ! আই স্যালুট টু ইউ, মাই ডিয়ার দাদা!

Wednesday, August 13, 2008

দাদার সাথে একটি সপ্তাহ- পর্ব ১

বেশ কিছু দিন থেকেই দাদা আমার বাসায় আসার পরিকল্পনা করছিলেন। সুযোগ হচ্ছিল না, তার উপরে সকলের বারণ আপনার এই শরীর নিয়ে ৫ তলায় ওঠা নামা করা সমস্যা হবে। তারপরও দাদা সুযোগ বুঝে ঢাকায় আসার মনস্থির করলেন। সফর সঙ্গী দাদী এবং আমার ছোট ভাই।

সবারই চিন্তা ছিল দাদা কিভাবে ৫ তলায় উঠবেন। আমি অবশ্য অতটা ভাবিনি। আমি দাদাকে মোটামুটি জানি; দাদা যদি মনে করেন তিনি উঠতে পারবেন না..... তাহলে কারও অনুরোধেই তিনি উঠবেন না; আর যদি মনে করেন তিনি উঠবেন তবে ঠিকই তিনি তা করবেন। ফুফু চেয়ার নিয়ে নিচে নামতে নামতে দাদা চার তলা উঠে বলছেন চেয়ারটা দাও একটু বসি। ফোনে খবর নিলাম দাদা ঠিকঠাক মত বাসায় পৌঁছেছেন।

ঐদিন বাসায় ফিরতে একটু রাত হলো। এসে দেখি দাদাকে ঘিরে সবাই গল্প করছে। ঢাকা শহরের গল্প.....ঢাকা শহরের দৈর্ঘ্য প্রস্থ জানতে চেয়েছেন, কেউ জবাব দিতে পারেনি! দাদা প্রথম ঢাকায় আসেন ১৯৫১ সালে। একায় আসেন। ঢাকায় ঠাঁই দেয়ার মত কেউ ছিল না। সচিবালয়ের সামনের রাস্তায় হাঁটছিলেন, এক লোকের সাথে দেখা। ঢাকায় পরিচিত কেউ নেই শোনাতে ঐদিন দাদাকে ভদ্রলোক আশ্রয় দিয়েছিলেন।

বাসায় কোরআন শরীফ খুঁজছিলেন। দাদা সাধারণত তাফহীমুল কুরআনের খন্ড পড়ে অভ্যস্ত। আমার কাছে পুরো কুরআন শরীফ একসাথে থাকলেও খন্ডগুলি ছিল না। দাদার জন্য খালার বাসা থেকে কয়েক খন্ড আনালাম। দাদা থাকাকালীন সপ্তাহটি বেশ মজার কেটেছে। অফিস থেকে ফিরেই বারান্দায় গিয়ে দাদার পাশে বসে দখিনা বাতাস খেতে খেতে গল্প করতাম।

দাদা কোথাও যেতে পারবেন না বিধায় ঢাকায় থাকা আত্নীয়রা প্রায় দিনই আমার বাসায় আসতেন। বাসাটা বেশ জমে থাকত।

খুররম জাহ মুরাদের 'কুরআন অধ্যয়ন সহায়িকা' বইটা দাদা খুব আগ্রহ নিয়ে পড়লেন। এই লেখকের লেখা দাদার এমনিতেই পছন্দ, বইটি পড়ে লেখকের খুব প্রশংসা করলেন। এই বইটি এবং তাঁর আরেকটি পছন্দের বই 'ইসলামী সমাজ বিপ্লবের ধারা' তাঁকে কিনে দিলাম। আমার একটি বই ছিল- "তাফহীমুল কুরআনের বিষয় নির্দেশিকা"...... বইটি দেখে দাদা বললেন, এটা দিয়ে তুমি কি কর? বললাম, মাঝে মধ্যে দ্রুত রেফারেন্স খুঁজে পেতে কাজে লাগে। দাদা যে বইটি পছন্দ করেছেন এবং চাচ্ছিলেন- সেটা বুঝতে পেরে দাদাকে বললাম আপনি এটা নিয়ে যাবেন যাওয়ার সময়। দাদা খুশী হলেন।

দাদা ৩০ পৃষ্ঠার একটি বই লিখেছেন। বইটির নাম দিয়েছেন মজবুত ঈমানের চেতনা। বইটিতে দুস্থদের প্রতি ইসলামের আবেদনটাকে বেশ জোর দিয়েছেন। দাদা মনে করেন এঁদের জন্য কাজ করা ঈমানের দাবী। সেই হাদীসটির কথাও স্মরণ করে দিলেন, সে-ই ব্যক্তি মুমিন নয় যে পেট পুরে আহার করে আর তার প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে। ভাবা যায়! প্রতিটা মানুষ মুমিন হলে কোন অভাব থাকতে পারে?

গল্পে গল্পে অনেক কথা হচ্ছিল দাদার সাথে। তাঁর মাথায় নতুন আরেকটি বিষয় ঢুকেছে। আল্লাহর আইন অনুযায়ী দেশ শাসন করলে সে দেশে কোন সংকট থাকে না, এটা কুরআনের চ্যালঞ্জ। অনেকে বলেন, ইসলামী বিধি-বিধান মত চলতে গেলে অমুকের সাহায্য বন্ধ হয়ে যাবে, এই সমস্যা হবে সেই সমস্যা হবে। কিন্তু কুরআন এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছে। কুরআনে নাকি বেশ কয়েক জায়গায় বিষয়টা স্পষ্ট করেই বলা আছে। কুরআনের শাসন মানলে ফুল-ফসলে ভরা একটি কল্যাণকর রাষ্ট্রে পরিণত হবে।

গ্রামে দাদার প্রতিষ্ঠিত একটা সংগঠন আছে, নাম ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ। এই সংগঠনের মুল কাজ দুস্থ-অসহায় এতিম বিধবাদের জন্য কাজ করা। এবারের রমজানে তাঁর কি পরিকল্পনা সেটা বললেন। ৫০ জনকে বাছাই করে তাদের প্রত্যেককে ২৫ কেজি চাল, দুই কেজি আলু, দুই কেজি চিনি, দুই কেজি সেমাই, ইত্যাদি দিবেন। এ কাজে তাঁর খরচ হবে ৪০ হাজার টাকা। ইতোপূর্বে, গত শীতে ৮০টি পরিবারে লেপ, ৪০ টিকে মশারি দিয়েছিলেন। গত তিন বছরে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা খরচ করেছেন। দাদা এসব কাজ করে খুব আনন্দ পান। অনেকে এসবকে বাড়াবাড়ি মনে করেন, তবে খুব কমই তিনি এসব সমালোচনাকে আমলে আনেন। দাদা আফসোস করে বলছিলেন, বড়লোকদের টাকার প্রতি মায়া খুব বেশি।

এসবের পরও দাদার মন খুব একটা তুষ্ট নয়। দাদার মতে অভাবী মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। দাদাকে বললাম, এভাবে হবে না। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। দাদা বললেন, সে প্রচেষ্টাও চলেছে। সুদমুক্ত কর্য দিয়েছি। কয়েকজন দাঁড়িয়ে গেছে, তবে বেশির ভাগই টাকা নিয়ে আর ফেরত দেয়নি। কে আবার ২০ টাকার জন্য ২০০ টাকার মামলা লড়তে যাবে? দাদাকে বললাম, সিস্টেম বের করতে হবে। সে রাতে দাদার আর ঘুম হয়নি!

দাদার ইচ্ছা- তাঁর ইউনিয়নে কোন অভাবী মানুষই রাখবেন না। মাঝে মাঝে মনে হয় এসব নিয়ে দাদা বাড়াবাড়ি করছেন। দাদাকে স্মরণ করিয়ে দিলাম, বাকারার শেষ আয়াত..... আমি কারও উপরই তাঁর সামর্থের অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেয়নি। দাদা জবাবে বললেন, শুধু বাকারায় না আরও বেশ ক'টি জায়গায় আছে বিষয়টি। আমি বাড়াবাড়ি করছি না, আমার যতটুকু সামর্থ ততটুকুই করি।

(আগামী পর্বে সমাপ্য)

Sunday, August 3, 2008

বন্ধু তোমার পথের সাথীকে চিনে নিও


মক্কাবাসী জাহের ইবনে হারাম দেখতে কুৎসিত একজন ব্যক্তি ছিলেন। চেহারায় এমন কিছুই ছিল না যা তাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে। এতদসত্ত্বেও রাসুল সা. এর সাথে তার ভাল বন্ধুত্ব ছিল। প্রতিবারই তিনি যখন রাসুল সা. এর সাথে সাক্ষাত করতে যেতেন সাথে উপহারসামগ্রী নিতেন।

রাসুল সা. মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করলে জাহের তার প্রিয় বন্ধুকে কাছে থেকে হারান। এটা তার জন্য যথেষ্ট কষ্টের ব্যাপার ছিল। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন তার বন্ধুর সাথে সাক্ষাত করতে মদীনায় যাবেন।

সিদ্ধান্ত মোতাবেক মদীনার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। বন্ধুর বাসায় যাওয়ার পূর্বে বাজারে যাওয়া তার রেওয়াজে পরিণত হয়েছিল। রেওয়াজমত মদীনার মার্কেটে তিনি কেনাকাটা করছেন।

ইতোমধ্যে প্রিয়তম নবীর কাছে খবর পৌঁছে যায় জাহের মদীনায় এসেছেন তার সাথে দেখা করতে। বন্ধুর আগমনে রাসুল সা. খুশী হলেন। তার অভ্যর্থনায় কিছু নাটকীয়তা দেখাতে চাইলেন। মনস্থির করলেন জাহের আমাকে দেখার পূর্বেই আমি জাহেরকে দেখব। বাজারের দিকে রওনা দিলেন জাহেরের খোঁজে। বাজারে গিয়ে জাহেরকে দেখতে পেয়ে তিনি পিছন থেকে তাকে জাপটে ধরলেন। অতঃপর রাসুল সা. বাজারের লোকদের ডেকে বলছেন, এ গোলামটা বিক্রি হবে... কে কিনবে একে? জাহের নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে ব্যস্ত, কনুই দিয়ে গুঁতা দিচ্ছেন। অপরিচিত জায়গায় কে তাকে এভাবে জাপটে ধরল? বড়ই ভাবনার ব্যাপার!

রাসুল সা. যখন তাকে ছেড়ে দিলেন, পরস্পর পরস্পরকে ভালমত দেখলেন। রাসুল সা.কে হারিয়ে জাহেরের চেহারায় আরও পরিবর্তন এসেছে। জাহের তখন তার বন্ধুকে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল আপনি এমন একজনকে বিক্রি করতে চাচ্ছেন যার কোন যোগ্যতায় নেই। কেউ এই অযোগ্যকে কিনবে না। রাসুল সা. তার বন্ধুর জবাবে কি বললেন? আল্লাহ কসম, তুমি আল্লাহর চোখে মোটেও অযোগ্য নও.... আল্লাহর কাছে তুমি অনেক মুল্যবান একজন।

আমরা সাধারণত কেবল তাদেরকেই গুরুত্ব দেই যাঁরা সমাজে স্ট্যাটাস সমৃদ্ধ, সোসাইটিতে যাকে সুন্দর দেখায়। যা আমাদের সাথে মানাবে না বলে মনে করি তা আমরা এভয়েড করি। প্রিয়তম নবী ছিলেন এসবের থেকে ব্যতিক্রম। এমন কে আছে যে তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা নিতে চায়?

Saturday, July 26, 2008

দেশকে ভালবাসেন না এমন লোক আছে নাকি?

যৌথ পরিবারের উদাহরণ দিয়ে শুরু করি, চার ভাই চার মনের মানুষ। চার ভাই-ই একইসাথে থাকেন, আই মিন একই পরিবারের সদস্য। সবাই-ই পরিবারের জন্য কাজ করেন, যদিও সবার মধ্যে ব্যাপক মতপাথর্ক্য রয়েছে। খুব বড় বড় সমস্যায় (যেমন পরিবারের অস্তিত্ব যেখানে প্রশ্নের সম্মুখীন) যখন পড়েন সবাই-ই আবার এক হয়ে যান। পরিবারে যে সচ্ছলতা আছে এমনটি নয়, তবুও কেউ তাদের পরিবারকে অচল পরিবার বললে খুব শক্তভাবেই ডিফেন্ড করেন। তবে পরিবারের ভিতরের কেউ এই দাবী বাইরে থেকে তুললে তখনই প্যাঁচ বাঁধে। অবশ্য এমনটি কখনই ঘটে না। তবে এটা ঠিক সবাই কোন না কোনভাবে ডমিনেন্ট করতে চান। এ ব্যাপারে একটা প্রতিযোগিতা চলে, তিনিই ডমিনেন্ট করেন যার যোগ্যতা যখন বেশি থাকে।

বাংলাদেশের মানুষ আসলে যথেষ্ট রাজনীতি সচেতন। তারা যে কারণেই যে দলকে পছন্দ করে থাকুন না কেন দেশের খোঁজখবর রাখেন, একেবারেই বিশেষজ্ঞদের হাতে ছেড়ে দেন না। এদেশে নানান কিসিমের মানুষ আছেন, বেশিরভাগই সহজ সরল। প্যাঁচ-গোজ কম বোঝেন। বেশি জনসংখ্যার দেশ বলে দুর্র্ঘটনার খবর বেশি নজরে আসে। তবুও অন্য অনেক দেশের থেকে এদেশে দুর্ঘটনা কম। গুজরাটের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নাই, সুদানের মত ক্ষুধা নাই, কাশ্মীর-ফিলিস্তিনের মত জীবনব্যাপী যুদ্ধ নাই, ইউরোপ- আমেরিকার মত ভঙ্গুর পারিবারিক ব্যবস্থা নাই, আফগানিস্তান-পাকিস্থানের মত ব্যাপক জঙ্গি সমস্যা নাই, ইরাকের মত জাতিগত আক্রোশ নাই, আছে বীজ ফেললেই ফসল ফলানোর মত জমি, প্রাকৃতিক সম্পদ আর সবচেয়ে বড় যে জিনিস তা হচ্ছে এদেশের শান্তিকামী মানুষ।

আমি অবাক হয়ে যায়, যখন দেখি টিভি রিপোর্টাররা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের নিয়ে রিপোর্ট করতে যান, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাক্ষাতকার নেন- তবুও তাদের হাসিমুখ। রাতে ঠিকানাহীন মানুষের সাক্ষাতকার নেন তবুও তাদের কষ্টের কথা স্বতস্ফুর্তভাবে বের হয় না। ফলে রিপোর্টে করুণার ভাব আনতে আলাদা টোন এড করতে হয়।

এদেশকে কিভাবে দেখতে চান, সেটা নিয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন ধরনের স্বপ্ন লালন করেন। কেউ মনে করেন সমাজতন্ত্রই আমাদেরকে ভাল চালাতে পারবে, কেউ ভাবেন ধর্মনিরপেক্ষতা, কেউ মনে করেন জাতীয়তাবাদ, আবার কেউ ইসলামের সাবর্জনীনতাকে তুলে এনে এখানে মুক্তির পথ খুঁজেন। সে কারণেই কারও কাছে আলোড়িত চরিত্র চে গুয়েভারা, কারও কাছে গান্ধীজি বা বঙ্গবন্ধু, কেউ বা মেজর জিয়া আবার এমনও অনেকে আছেন যারা রাসুলের আদর্শ দ্বারাই বেশি আলোড়িত হন। তবে আমার কাছে যে জিনিসটি স্পষ্ট তাহলো দেশকে ভালোবাসেন না এমন লোক নেই। আগে প্রায়ই বলতে শুনতাম অমুক দেশের শত্রু ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার মনে হয় না কেউ সচেতনভাবে দেশের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখেন। তবে এটা ঠিক অনেকে স্বার্থকে বড় করে দেখেন, স্বার্থকে টিকিয়ে রাখতে অসচেতনভাবে দেশের বিরুদ্ধেও ভূমিকা রেখে বসেন।

আজ আমাদের নিজেদের প্রয়োজনেই, স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়োজনে দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ রাখা জরুরী- উপরের পরিবারের মত। সকলেরই উচিত, নিজের আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করেন- ভাল কথা। কিন্তু দেশকে বিভক্ত করার চেষ্টা করা এটা আপনাদের আদর্শের জন্যই কল্যাণকামী নয়। তবে আদর্শই যদি এমন হয় যে, মানুষে মানুষে বিভক্তি-বিদ্বেষ ঘৃণাবোধ গড়ে তোলা তাহলে এতে সফল হওয়া যেতে পারে। কিন্তু আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি এরকম মানুষ অন্তত বাংলাদেশে নাই।

Thursday, July 24, 2008

যেই হাসিতে প্রাণটা জুড়ায় সেই হাসিটা চাই আমরা, সেই হাসিটা চাই

হঠাৎ করেই একটা ছবি মানবসপটে ভেসে উঠল। যে ছবিটা সহজে ভুলতে পারি না। খুব চমৎকার এক হাসির ছবি। কোন ভেজাল নেই; ঝকঝকা, তকতকা, ফকফকা এক হাসি। প্রাণটা জুড়িয়ে যাওয়ার জন্য এই হাসির কোন তুলনা নেই।

আজ থেকে সম্ভবত ৭/৮ বছর আগের কথা, যখন আমি ইন্টারে কলেজে পড়ি। বাসে করে যাচ্ছিলাম কোথাও। বাস তখনও ছাড়ে নাই। বাসে বসার পরে বাস ছাড়ার আগ পর্যন্ত সময়টা খুব বিরক্তিকরভাবে কাটে। বিরক্তির মাত্রা আরও বেড়ে যায় যখন দেখি টাইম ওভার হয়ে গেছে বাস ছাড়ার কোন লক্ষণ নেই। বসে আছি বাসে; এই চানাচি-ই-র, এই ঝালমুড়ি, এই শসা খাবেন নাকি শসা-আ-আ, এই পেপার..... নানান রকমের ফেরিওলার চিৎকারে বিরক্তির মাত্রা আরও বেড়ে যায়।

এরই মধ্যে দশ বারো বছরের এক মেয়ে উঠল বাসে, হাতে বকুলের মালা। বাসের মধ্যে অনেককে ধরল মালা কেনার জন্য। আমার সামনে এসে বলল, ভাইয়া একটা মালা নিবেন? মালা দিয়ে আমি কি করব? দিবেন প্রিয়জন কাউকে.... আমার কোন প্রিয়জন নেই। কি মনে হল, হঠাৎ করে বললাম। কত দাম? দুই টাকা- জবাব এল। আমি ওর হাতে দুই টাকা তুলে দিলাম। ও একটা মালা আমার হাতে দিল। আমি বললাম, থাক দিতে হবে না ওটা রেখে দাও। মেয়েটা তখন এমন সুন্দর একটা হাসি দিল, যে হাসিটা ঔসময়ের পূর্বেও কখনও দেখি নাই; পরেও না।

বিশ্বাস করুন, একটুও বাড়িয়ে বলছি না। যদি কাছে ক্যামেরা থাকত তবে আপনাদের দেখাতে পারতাম। আমি নিশ্চিত সেই হাসির চিত্রটা তুলে ধরতে পারলে আমি বিখ্যাত হয়ে যেতাম, আর বদলে যেত আমার জীবনের চিত্রটাই। এই হাসি মনের গভীরে আমি এখনও লালন করে চলেছি। দুই টাকায় পাওয়া হাসি.......?

ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স-২

ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স- এই টার্মের উৎপত্তির পিছনে মেয়র এবং স্যালভিকে কৃতিত্ব দেয়া যেতে পারে। তাদের ভাষায়, “এটা সামাজিক বুদ্ধিমত্তার (Social Intelligence) একটা রুপ যা নিজের এবং অন্যের অনুভূতি এবং আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। এটা দিয়ে মানুষের মধ্যে পাথর্ক্য করা সম্ভব এবং একই সাথে এই তথ্যকে কাজে লাগিয়ে অন্যের চিন্তা ও কাজকে গাইড করা সম্ভব।”

প্রফেশনাল লাইফে উন্নতির জন্য ই কিউ চারগুণ বেশি কাযর্করী আই কিউ এর চেয়ে। ৮০জন পিএইচডিধারীর উপর জরিপ চালিয়ে এই সত্যটা বোঝা গেছে। ১৯৫০-এ যখন তারা গ্র্যাজুয়েট ছাত্র ছিলেন, তখন তাদের উপর পারসনালি টেস্ট, আই কিউ টেস্ট এবং ইন্টারভিউ নেয়া হয়। ৪০ বছর পর যখন তারা ৭০ এর ঘরে পা দিয়েছেন, তখন দেখা গেছে- তাদর প্রফেশনাল লাইফের উন্নতি নির্ভর করেছে তাদের রিজিউমি (resume), স্ব স্ব ক্ষেত্রে এক্সপার্ট কর্তৃক মূল্যায়ণ এবং তারা কোন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছেন তার উপরে।

তবে আই কিউ এর যে কোন ভূমিকা নেই তা কিন্তু নয়। ভাল কমপিটিটরদের সাথে কমপিট করে প্রফেশনাল লাইফে যেতে আই কিউ এর প্রয়োজন হয়। প্রফেশনাল লাইফে প্রবেশের পর এটার ভূমিকা কমই থাকে। তখন ই কিউ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। তাইতো দেখা যায় যেখানে পিএইচডিধারী একজন শিক্ষক ক্লাসে ছাত্রদের কোন মজা দিতে পারছেন না, অথচ পিএইচডি নাই এমন একজন শিক্ষক ক্লাসে বড় প্রভাব তৈরি করে রেখেছেন। এর পিছনে ই কিউ এর প্রভাবটাই মূখ্য। তিনি সহজে ছাত্রদের ইমোশনকে বুঝতে পারেন এবং নিজের ইমোশনকে কাযর্করভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এবং এর ভিত্তিতে অন্যকে গাইড করতে পারেন।

যারা অপটিমিস্ট, তারা পেসিমিস্টদের থেকে কয়েকগুণ বেশি সফলতা দেখাতে পারেন। সেলসম্যানদের উপরে চালানো অপর এক গবেষনায় দেখা গেছে, অপটিমিস্টরা ৩৭ ভাগ বেশি সফল ছিলেন পেসিমিস্টদের তুলনায়।

গোলম্যান ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স এর ৫টি ডোমেইনের কথা বলেছেন ঃ
১. নিজের আবেগকে জানা
২. আবেগের সমন্বয়
৩. নিজের মোটিভেশন
৪. অন্যের আবেগকে ধরতে পারা এবং বুঝতে পারা
৫. অন্যের সাথে সম্পর্ক স্থাপন

নিচে কিছু ইমোশন তুলে ধরা হলঃ

• Simple emotions
o discovery - confusion
o gain - loss
o surprise - no surprise - expectation
o wonder - commonplace
o happiness - unhappiness
o amusement - weariness
o completion - incompleteness
o courage - timidity - cowardice
o pity - cruelty
o repentance - lack of regret - innocence

• Complex emotions
o pride - modesty - shame
o closeness - detachment - distance
o complaint/pain - doing OK - pleasure
o caution - boldness - rashness
o patience - mere tolerance - anger
o relaxation - composure - stress

• Pure emotions
o fear - nervousness - security
o togetherness - privacy
o respect - disrespect
o appreciation - envy
o love - no love lost - hatred
o familiarity - mystery

• Propositional attitudes
o attentive - inattentive - avoiding
o alertness - exhaustion
o intent - indecision - refusal
o effort - no real effort - repose
o hope - despair
o desire - indifference - reluctance
o interest - no interest - repulsion

• Complex propositional attitudes
o permission - prohibition
o competence - incompetence
o obligation - freedom
o constraint - independence - resistance to constraint
o request - negative request
o suggestion - no suggestion - warning